বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দলের আন্দোলন ও আইনি লড়াই ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার খালেদা জিয়াকে এমন সময়ে মুক্তি দিয়েছে যখন সারা দেশ করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ। বেগম জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। অবশ্যই তার মুক্তির সংবাদ স্বস্তির। তার মামলার গুণাগুণ বিচার না করলেও এটুকু আমরা বুঝতে পারি যে, বিচারিক আদালতে দুটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হলেও উচ্চ আদালতে তা বিচারাধীন আছে। এ অবস্থায় যেকোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। এর আগে সাবেক সামরিক শাসক এরশাদসহ আরও অনেককে একই ধরনের মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই সময়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানটি কীভাবে চলেছে তা সকলেরই জানা আছে। কার বিরুদ্ধে মামলা হবে কার বিরুদ্ধে হবে না এসব তখন দুদক ঠিক করত না। সবই হত সেনাসমর্থিত সরকারের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের নির্দেশে। অনেক নামকরা আইনজীবী সে সময় সাগ্রহে দুদকের মামলা করেছিলেন এই ভেবে যে এবার দুর্নীতিবাজেরা ধরা পড়বে। আবার সে সময়ে নেপথ্যের ক্ষমতাধরদের চাপে অনেকে বিবাদীর পক্ষে আইনি লড়াই চালাতেও পারেননি। বর্তমানে দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও বাছাই করা। এসব তথ্য ও সত্য নিশ্চয়ই দুদকের আইনজীবীর জানা আছে।
শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তি তার দলের নেতাকর্মীদের জন্য স্বস্তির হলেও এর মধ্যে রাজনৈতিক চাল সুস্পষ্ট। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। অথচ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষে। তার কারাদণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও এর মধ্যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বাসায় বসে চিকিৎসা করতে হবে। একজন মুক্ত মানুষ কোথায় বসে চিকিৎসা করবেন তা সরকার নির্ধারন করে দিতে পারে না। অথচ ওনার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। আর বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না থাকলেও খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে যেতে পারছেন না। সারা বিশ্বেই কঠিন অবস্থা বিরাজমান। উন্নত দেশগুলোর করোনা পরিস্থিতি তো বাংলাদেশের চেয়েও নাজুক।
বাংলাদেশে সবকিছু হয় রাজনীতির হিসাব–নিকাশে। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়েও রাজনীতি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। খালেদা জিয়ার মুক্তিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এত দিন আইন-আদালতের বিষয়, সরকারের কিছু করণীয় নেই বলে বেড়াতেন তারা এখন অন্য যুক্তি দাড় করাতে ব্যস্ত। আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকার রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। তারা দেশবাসীকে বোঝাতে চেয়েছে বিএনপি আন্দোলন বা আইনি লড়াই করে খালেদাকে মুক্ত করতে পারেনি। সরকার দয়ার বশবর্তী হয়ে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়েছে। সুতরাং এর কৃতিত্ব সরকারের।
সরকারের সহৃদয়তা,করোনা সংকট কিংবা রাজনৈতিক চাল যেকারণই হোক, খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এটাও আশা করি যে করোনা সংকটের মতো দেশের রাজনৈতিক সংকটও দ্রুত কেটে যাবে।